Skip to main content

গবেষণা প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

Report Writing
ÿ গবেষণা প্রতিবেদন লেখার গুরুত্ব/তাৎপর্যঃ
গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে গবেষণার প্রতিবেদন লিখন। এটি গবেষণার সর্বশেষ পর্যায়। এ পর্যায়ে গবেষক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সকলের সামনে প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরে। তাই গবেষণা প্রতিবেদন লেখার গুরুত্ব ও তাৎপর্য উল্লেখযোগ্য। নিচে গবেষণা প্রতিবেদন লেখার গুরুত্ব আলোচনা করা হল-
১। অপূর্ণতাঃ
গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষণা প্রতিবেদন লিখন এক অন্যতম প্রধান কার্যাবলী। কোন গবেষনার প্রতিবেদন না লেখা পর্যন্ত গবেষণা প্রক্রিয়াটি অসম্পূর্ণ থাকে।
২। মূল্যহীনতাঃ
একজন গবেষকের সর্বাধিক মেধা সম্পন্ন ধারণা (Hypothesis), সুপরিকল্পিত গবেষণা নকশা এবং বিস্ময়কর অনুমান (generalizations) এছাড়া গবেষণা হতে প্রাপ্ত মূল্যবান ফলাফল, মূল্যহীন হতে পারে যদি সেগুলোকে অন্যদের সামনে তুলে ধরা না হয়।
৩। উদ্দেশ্যঃ
গবেষণালব্ধ ফলাফল অন্যদের না জানানো পর্যন্ত গবেষণার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণতা পায় না। গবেষণাটি অবশ্যই বিতর্কহীনভাবে মানুষের জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে এটি এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

ÿ গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমূহঃ
1. Logical Analysis of the Subject Matter:
গবেষণা প্রতিবেদন লেখার এটি হচ্ছে প্রথম ধাপ। এ অংশে গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট নমুনায়গুলো যথাযথ ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে এই বিশ্লেষণ কার্য সম্পাদন করা হয়ে থাকে-

ক) সময়ের ভিত্তিতে বর্ণনাঃ
একজন সফল ব্যবসায়ী তার সফলতার কথা যদি এভাবে বলে, যেমন- ২০০২ সালে সে ৫,০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করলো, ২০০৩ সালে তার মুনাফা সহ মূলধন হলো ৫০,০০০ টাকা এবং ২০১২ সালে তিনি ৫ কোটি টাকার মালিক হন। এই ঘটনাটি সময়ের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে।

খ) ঘটনার ধারাবাহিকতায় বর্ণনাঃ
ঐ ব্যবসায়ী তার সফলতার কথা এভাবেও বর্ণনা করতে পারে, যেমন- ৫০০০ টাকা নিয়ে তিনি প্রথম ব্যবসায় শুরু করলেন তারপর তিনি এ থেকে মুনাফা করে ৫০,০০০ টাকা মূলধন তৈরি করলেন এবং এখন  তার মোট মূলধন ৫কোটি টাকা। এটি ঘটনার ক্রমানুসারে বর্ণনা।

2. Preparation of the Final Outline:
এটি গবেষণা প্রতিবেদন লেখার দ্বিতীয় ধাপ। এ অংশে গবেষক তার দীর্ঘ প্রতিবেদনটির একটি কাঠামো তৈরি করেন। যার ভিত্তিতে তিনি তার প্রতিবেদন লিখনের কাজ করতে থাকেন। এর মাধ্যমে একটি যৌক্তিক কাঠামোবদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব হয় এবং গবেষক কোন কাজের পর কোন কাজটি সম্পাদন করবেন, তার উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

3. Preparation of the Rough Draft:
এই ধাপে প্রতিবেদন তৈরির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপকে অনুসরণ করা হয়। গবেষনা প্রতিবেদন লিখনের ক্ষেত্রে গবেষকের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এ ধাপে গবেষক তার গবেষণা কাজের সকল বিষয়ে বর্ণনা করেন। এখানে তিনি গবেষণার জন্য বিভিন্ন বিষয় খুজে বের করার পদ্ধতি বর্ণনা করে। তাছাড়া তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি, যে সকল সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, গবেষণার ফলাফল, বিভিন্ন বিষয়ে তার ধারণা এবং বিভিন্ন সুপারিশ যেগুলো তার গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট।

4. Preparation of the Final Bibliography:
গবেষণায় যে সকল সেকেন্ডারী ডাটা ব্যবহার করা হয় সে সকল ডাটাগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে সেই উৎস এ অংশে তুলে ধরা হয়।এই উৎসকে দুটি অংশে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথম অংশে গবেষণার কাজে যে বই ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলো বর্ণ বিন্যাস করে সাজানো হয় এবং দ্বিতীয় অংশে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের নাম বর্ণ ভিত্তিতে সাজানো হয়।

5. Writing the Final Draft:
গবেষণা প্রতিবেদনের এটি হচ্ছে সর্বশেষ ধাপ। একজন গবেষকের উচিত এ অংশে তার প্রতিবেদন যেন উদ্দেশ্যমূলক ও সচেতন হয় এবং প্রতিবেদনে যথা সম্ভব সহজ ভাষা ব্যবহার করতে হবে। কোন অস্পষ্ট বা দূর্বোধ্য ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। গবেষকের অভিজ্ঞতা হতে গবেষণার বিষয়গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট উদাহরণ দিতে হবে। একটি গবেষণা প্রতিবেদন নীরস হওয়া ঠিক নয় এটি অবশ্যই মানুষের কাছে আনন্দময় ও চাহিদা সম্পন্ন হতে হবে এবং অবশ্যই বাস্তবভিত্তিক হতে হবে। গবেষককে প্রতিবেদনটি সতর্কতার সাথে পড়ে দেখতে হবে এবং এর দূর্বল দিকগুলো খুজে বের করতে হবে। প্রতিবেদনের উপস্থাপনের দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া প্রতিবেদনে বানান ও ব্যাকরণগত সমস্যা থাকলে সেগুলোর সমাধান করতে হবে।
ÿ Layout of the Research Report:
গবেষণা প্রতিবেদনটি যে পাঠক পড়বে সে যন সহজে গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতি এবং চিন্তাধারা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারে, যা তাকে একটি সত্য ধারণা প্রদান করতে পারে এবং গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে মতামত প্রদান করতে পারে,আর এগুলোর জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক এবং সুন্দর গবেষণা প্রতিবেদনের লেআউট। গবেষণা প্রতিবেদনের লে আউট বলতে বোঝায় গবেষণা প্রতিবেদনে কি কি অন্তর্ভূক্ত করা হবে। একটি উপযুক্ত গবেষণা প্রতিবিদেনে যে বিষয়গুলো অন্তভূক্ত করা উচিৎ তা আলোচনা করা হল-

1. Preliminary pages:
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠাগুলোর শুরুতে থাকে গবেষণার শিরোনাম এরপর মুখবন্ধ এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার। তারপর একটি সূচীপত্র দেওয়া হয় যা হতে পাঠক বা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সহজেই গবেষণা প্রতিবেদনের মধ্যকার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খুজে বের করতে সক্ষম হন।

2. Main text:
একটি গবেষণা প্রতিবেদনের সকল বিষয়গুলো এ অংশে তুলে ধরা হয়। গবেষণার ভূমিকা থেকে শুরু করে উপসংহার পর্যন্ত এ অংশে অন্তর্ভূক্ত। নিচে এর অংশগুলো আলোচনা করা হল-

a. Introduction:
ভূমিকা থেকেই মূল প্রতিবেদনের শুরু হয় এবং সাধারণত এখান থেকে পৃষ্ঠা নম্বর শুরু হয়। প্রতিবেদনের ভূমিকায় থাকে গবেষণার সমস্যা, প্রকল্প বা অনুমান এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যবলী সম্বন্ধে সঠিক, সুস্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। গবেষণায় ব্যবহৃত প্রশ্নপত্রের ধরণ, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি, তথ্য বিশ্লেষণে ব্যবহৃত উপকরণ ও পদ্ধতির বর্ণনা। তাছাড়া গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দ ও ধারণার সঠিক সংজ্ঞা এবং দ্ব্যর্থহীন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও ভূমিকায় দেওয়া হয়। বর্তমান সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্বে কোন গবেষণা হয়ে থাকলে ভূমিকায় তার পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া গবেষণা সমস্যাটির তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক গুরুত্বের বিষয়ও ভূমিকার উল্লেখ করা হয়। মোটকথা এ অংশে গবেষণা সম্পর্কে সংক্ষেপে একটি সামগ্রীক ধারণা প্রদান করা হয়, যাতে পাঠক গবেষণা সম্পর্কে একনজরে একটি ধারণা পায়।

b. Statement of findings and recommendation:
ভূমিকা শেষ করার পর, গবেষণা প্রতিবেদনে গবেষণালব্ধ ফলাফল এবং সুপারিশগুলো এ অংশে সহজ ও সাবলীল ভাষায় তুলে ধরা হয়, যাতে সংশ্লিষ্ট সকলে সহজে বুঝতে পারে। গবেষণালব্ধ ফলাফল এখানে সংক্ষেপে লেখা হয়। এছাড়া গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে কোন সুপারিশ করা সম্ভব হলে এখানে তা উল্লেখ করা হয়। গবেষণার ফলাফল থেকে সমস্যাটির যেসব দিক জানা বা বোঝা সম্ভব হয়নি এবং কোন কোন দিক নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন প্রতিবেদনের এ অংশে তা নির্দেশ করা হয়।

c. Results:
গবেষণা প্রতিবেদনের এ অংশে সংগৃহীত উপাত্ত সমূহকে বিভিন্ন তথ্য গাণিতিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে টেবিল এবং ছকে বর্ণনা করা হয়। এখানে ফলাফলের বৈধতা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়। সকল ফলাফল এখানে ধারাবাহিকতার সাথে যৌক্তিকভাবে সাজানো হয়। তবে এ অংশে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু লেখা যাবে না বা কোন সম্ভাব্যতার কথা থাকবে না।

d. Implications of the results:
প্রতিবেদনের মূল অংশের শেষের দিকে গবেষককে পুনঃরায় তার গবেষণার ফলাফল পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরা উচিত এবং বাস্তবে এই ফলাফলের প্রয়োগ উল্লেখ করা উচিত। অর্থাৎ ফলাফল কোন প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বকে সমর্থন করে, না নতুন কোন মতবাদের জন্ম দেয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা; এবং বাস্তব জীবনের কোন সমস্যা সামাধানে এ ফলাফল প্রয়োগ করা যায় কিনা সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। অর্জিত ফলাফল গবেষণার কোন প্রকল্পকে সমর্থন না করলে কি কি সম্ভাব্য কারণে প্রকল্পটি সমর্থিত হয়নি তাও এ অংশে আলোচনা করা হয়।

e. Summary:
এ অংশে সম্পূর্ণ গবেষণার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। গবেষণার উল্লেখযোগ্য দিক গুলো যেমন-গবেষণা সমস্যা, পদ্ধতি, প্রধান প্রধান ফলাফল সংক্ষেপে বর্ণনা করা। তাই প্রতিবেদনের সারাংশটি সংক্ষিপ্ত অথচ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

3. End matter:
এটি হচ্ছে গবেষণা প্রতিবেদনের সর্বশেষ অংশ। এই অংশে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়-

a. Appendices:
এ অংশে গবেষণার ব্যবহৃত প্রশ্নপত্র, নমুনা তথ্য, গাণিতিক বিশ্লেষণ, টেবিল ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়।

b. Bibliography:
গবেষণায় যে সকল বই, পত্রপত্রিকা, জার্নাল, ওয়েব এড্রেস হতে সেকেন্ডারী ডাটা সংগ্রহ করা হয় সে সকল বই, জার্নাল,পত্র-পত্রিকা এবং ওয়েব লিংক এ অংশে বর্ণের ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হয়।

c. Index:
এ অংশে কোন ব্যক্তি, স্থান, বিষয়ের নাম বর্ণের ক্রমানুসারে সাজিয়ে লেখা হয়। সেই সাথে প্রতিবেদনের মধ্যে উল্লেখিত পৃষ্ঠা নম্বর এ অংশে দিতে হয়।

Comments

  1. দারুন লেগেছে তবে আমি প্রতিবেদনে লেখার নিয়ম কানুন সম্পর্কে লিখেছি আপনি চাইলে পড়তে পারেন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ছড়িয়ে দিন আপনার গবেষণা

আমাদের মাঝেই অনেক গবেষক আছেন যারা তাদের প্রতিভা প্রকাশের যথাযথ মাধ্যম না পেয়ে হারিয়ে যান কালের স্রোতে।তাই আমরা জানতে ও জানাতে তৈরী করেছি এক যথাযথ মাধ্যম। চলুন বিশ্বকে জানি এবং জানিয়ে দিই। গবেষণা প্রকাশ করতে আপনার করণীয় আপনার গবেষণা পত্রটি বিস্তারিত ও যথাযথ উপায়ে  লিখে পাঠান আমাদের কাছে।যথাযথ লেখার পদ্ধতি জানতে এই লিঙ্ক ভিজিট করুন। আমরা আপনার গবেষণাকে তুলে ধরব বিশ্বর সামনে।